বন্ধুরা, আজ আপনাদের সরাসরি থাইল্যান্ড ভ্রমণ নিয়ে লিখবো।আজকে কোনো আজাইরা কথা বলে সময় নষ্ট করবো না । তার আগে আপনি যদি বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে আমার বিদেশ ভ্রমণ গাইডলাইন বিষয়ক ব্লগটি পড়ার অনুরোধ রইলো। আমি একা একা বিদেশ ভ্রমণ করি। এতেই আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করি সত্যি বলতেই।
দেশ পরিচিতিঃ
দারুন একটি দেশ। খরচ তুলনামূলক অনেক কম মনে হয়েছে আমার কাছে। অনেক কিছুই বাংলাদেশের থেকেও কম দাম যদি আপনি কোয়ালিটির দিক বিবেচনা করেন। প্রধান ধর্ম হলো বৌদ্ব। তাই খুব বেশি শুকর ও অন্যান্য খাবারদাবার বেশি। খাবার দাবারের দিক আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। তারা ইংরেজী খুব ভালো বুঝে না।
বিশেষ কিছু যায়গা বা হোটেল ছাড়া এভারেজ জনগন ইংরেজী বুঝতেই পারে না। তাই আপনাকে ভ্রমন অভিজ্ঞতা দিয়ে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে। থাইল্যান্ডে শহরকেন্দ্রীক ও সমুদ্রতীরবর্তী উভয় সৌন্দর্য বিদ্যমান। ব্যাংকক শহরটি আমার কাছে এতোই ভালো লেগেছে যে, আমার সেকেন্ড হোম হিসাবে থাইল্যান্ডকে বেছে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার। আরো কিছু তথ্য দিচ্ছিঃ
Country: Thailand
Capital: Bangkok
Currency: Thai Bhat – 2.67 BDT
Area: 513,120 km²
Population: 6.8 Crore
Uber: Available
Religion: Buddhism
Airport: Suvarnabhumi Airport
Weather Average: 28 Degree C
থাইল্যান্ড ভ্রমণের খরচঃ
থাইল্যান্ড ভ্রমন খরচ সিঙ্গাপুর এর তুলনায় প্রায় আড়াই গুন কম। আসলেই অনেক কম খরচ থাইল্যান্ডে। তবও আমার মনে হয় বিদেশ ভ্রমন কখনোই বাজেটের মধ্যে হয় না। কারনটা আপনি বিদেশ গেলেই বুঝতে পারবেন। অন্তত আমার কাছে বিদেশ ভ্রমন মানেই একটু রিলাক্সড ভ্রমন ও ঝামেলাবিহীন ভ্রমন। এখানে অনেক কিছুই হিসেব করে করা হয়ে ওঠে না। অন্তত আমি পারি না। তাই খরচপাতি নির্ভর করবে আপনার উপর।
৭০ হাজার টাকা দিয়েও আপনি দারুন একটি থাইল্যান্ড ভ্রমন করে আসতে পারবেন একটু টাকা বাচাতে পারলেই। কিন্তু আমার সর্বমোট খরচ ছিলো ২ লাখ টাকা। হ্যা। আমি অনেক কিছু এক্সেসিভ করেছি যা মোটেও করার দরকার ছিলো না। কারন আমার কাছে ভ্রমন মানেই হলো অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ।সামনে যা পাই তাই টেষ্ট করে দেখি। আর একটি কথা হলো গ্রুপ ট্যুর করলে খরচ অনেক কম পড়বে। তবে আমি বলবো অন্তত জনপ্রতি ১ লাখ টাকা বাজেট রাখার জন্য। এতে কোনকিছু করতে দ্বিধা লাগবে না। যদি কম খরচে হয় তাহলে প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু বাজেট রাখাটা ভালো।
থাইল্যান্ড ভিসাঃ
আপনাকে আগে থেকে থাইল্যান্ডের ভিসা নিতে হবে। থাইল্যান্ডের ভিসা নিতে হলে আপনাকে কোন ট্রাভেল এজেন্সীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আমার সাড়ে চার হাজার টাকা লেগেছে। সাথে সাথে যে সকল ডকুমেন্ট দিয়েছি তা হলোঃ
১। পাসপোর্ট ও দুই কপি ছবি (35 x 45 mm)
২। ট্রেড লাইসেন্স
৩। ব্যাংক ষ্টাটমেন্ট
৪। ব্যবসায়ের ভিজির্টি কার্ড দুই কপি
৫। ব্যবসায়ের প্যাড দুই পিস।
ভিসা প্রসেস করতে ৭ কর্মদিবস সময় লাগে। আপনাকে এম্বাসী থেকে ফোন দিয়ে তথ্য ভেরিফাই করবে। তাই ফোনটি খুব গুরুত্বপূর্ন। না ধরতে পারলে আপনি ভিসা পাবেন না। আমার একবার রিজেক্ট ও খেয়েছিলো ফোন ধরতে পারিনি বলে।
থাইল্যান্ড ভ্রমণ অভিজ্ঞতাঃ
আমি যা যা করেছি তাই তাই উল্লেখ করবো। প্রথমে ভিসা পাওয়ার পর ঘরে বসে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সে ঢাকা টু ব্যাংকক এর রিটার্ন টিকিট কাটি আমার ব্রাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। যাত্রার আগেরদিন আমার ভ্রমন পরিকল্পনার ব্লগটি আমি নিজেই পড়ে নেই। সবকিছু ঠিকঠাক করে ব্যাগ গুছিয়ে নেই। গাড়ি করে 13-03-2018 তারিখে রওনা দেই ব্যাংকক এর উদ্দেশ্যে।
বলে রাখা ভালো 12 তারিখে নেপালে ইউএস বাংলার BS-211 ফ্লাইটের বিমান বিধ্বস্ত হয় ৭১ জন যাত্রী সহ। কি পরিমান ভয় নিয়ে গিয়েছিলাম ঐ দিন ভাবলে আমার এখনো ভয় লাগে। এদিকে পাসপোর্টের মেয়ার কম। না গেলেও সমস্যা। তাই যেতে বাধ্য ছিলাম। আমার যাত্রা ছিলো BS-213 ফ্লাইটে।
আমার ভ্রমণের ছবি এলবাম দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বিমানবন্দরে পৌছালাম। নিস্তব্ধ বিমানবন্দর। এতো শান্ত আমি কখনোই দেখিনি ঢাকার বিমানবন্দর।আগের দিন এতো হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার ছাপ যেনো পুরু বিমানবন্দর জুড়ে। ভয়ে ভয়ে বিমানে উঠলাম। প্রায় অর্ধেক যাত্রীর সিট খালি। তারা আসেনি। বুঝতেই পারছেন কি ভয়ানক পরিবেশ।
কেবিন ক্রুদের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে যে, কি পরিমান ভয় আর আতঙ্ক যে কাজ করছিলো তাদের মনেও। হাসিতে যেনো কি একটা ঘাটতি রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সবাই এক প্রকার ভয় নিয়ে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ৩ ঘন্টা পর পৌছালাম ব্যাংকক এর সুবর্নভূমি এয়ারপোর্টে। আপাতত স্বস্তি কাজ করছে। সেখানে গিয়ে আমি প্রথমে এয়ারপোর্টের হোটেল থেকে ঠান্ডা মাথায় খেয়ে নিলাম। পেট শান্তি তো জগৎ শান্তি। হা হা হা।
আমার হোটেল ছিলো পাতায়া তে। এয়ারপোর্ট থেকে ২ ঘন্টার বাস জার্নি। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই একটি বাস সার্ভিস দেখতে পেলাম পাতায়ার। সে বাসের টিকিট কেটে উঠলাম বাসে। দারুন বাস সার্ভিস। মনে হচ্ছিলো যেনো বিমানে যাচ্ছি। মুহূর্তেই দুই ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেলো। পাতায়া যাওয়ার পর উবার দিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে হোটেলে উঠলাম। Lumpini Park, Jomtien হলো আমার হোটেলের নাম।
হে আল্লাহ! কি দারুন পরিবেশ! আমি অভিভূত। মন ভোলানো বাতাস। বাতাসে যেনো কেউ ফুলের ঘ্রান স্প্রে করে রেখেছে। অথচ সবই প্রাকৃতিক ঘ্রান। শুধু আমি কেনো, পৃথিবীর যে কেউ এই পরিবেশ পেলে আর কোথাও যেতে চাইবে না। আমার জীবনে পাওয়া অন্যতম শ্রেষ্ট পরিবেশ। আমি অবশ্যই সৌভাগ্যবান। রুম ভাড়া মাত্র ২৫ ডলার। কি দারুন রুম! আমি অবাক না হয়ে পারিনি। তবে আমার রুম খুজে নিতে খুব কষ্ঠ হয়েছে। কারন এতো সুবিশাল বিল্ডিং প্রজেক্ট আমি জীবনেও দেখিনি। ৩০ ডলার মতো হবে। আমি ছিলাম ১৯ তম ফ্লোরে।
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই উবার দিয়ে গেলাম পাতায়া টাইগার পার্কে। দারুন একটি জায়গা। ভালো লাগার মতো। অনেক অনেক বাঘ আছে এখানে। বাঘের সাথে ছবি তুললাম। অবশ্য আমার একটুও ভয় লাগেনি। আপনাদের শামীম ভাই খুব একটা ভয় পায় না সাধারনত। 😀
টাইগার পার্ক থেকে গেলাম পাতায়া শুটিং পার্কে। শুটিং পাকং জায়গাটি এতোই সুন্দর যে, আমি আপনাকে ব্যাখ্যা করতে পারবো না। আমি অনাআসেই কয়েক যুগ কাটিয়ে দিতে পারবো এতো সুন্দর পরিবেশে। গিয়ে নাইন এম এম পিস্তল ও এস এমজি দিয়ে শুটিং করলাম। আমার জীবনের প্রথম গোলাগুলি। তাই কিছুটা দ্বিধা কাজ করছিলো। ভিডিও আছে। দেখে নিতে পারেন।
দিন শেষ হয়ে গেলো দেখতে দেখতেই। তার মাঝখানে আবার তাদের ফ্লোটিং মার্কেটটি দেখে নিলাম। তার পরদিন বিশ্রাম নিলাম। সাড়াদিন হোটেলে ঘুমিয়ে কাটালাম। রাতে বসে বসে ফুকেট যাওয়ার বাস টিকেট কাটলাম। ১৬ ঘন্টা লাগে পাতায়া থেকে ফুকেট যেতে।
রাতে একটি বাংলাদেশী হোটেল থেকে ডিনার করে ঘুমিয়ে পরলাম। তার পর দিন সাড়াদিন এদিক সেদিক ঘুরে ৩ টার দিকে বাস কাউন্টারের সামনে হাজির হলাম। ৫ টায় বাস ছাড়লো। পরদিন সকাল ৯ টায় পৌছালাম ফুকেট বাস কাউন্টারে। সেখান থেকে আমার হোটেল “Hotel De Ratt” এ গেলাম। এটা শহর নয়। একটু গ্রামের হাতছানি আছে এখানে। সাড়াদিন বাস ভ্রমনে বেশ ক্লান্ত আমি। বিশ্রাম নিলাম। পরদিন গেলাম বীচ ভ্রমনের জন্য।
ফুকেট এর কিছু বিখ্যাত আইল্যান্ড এ যাওয়ার জন্য Sea Star এ প্যাকেজ নিলাম হোটেল রিসিপশনিষ্ট থেকে। ফি ফি আইল্যান্ড, মায়া বে ও আরো বেশ কয়েকটা বিখ্যাত আইল্যান্ড দেখালো আমাদের। সাড়াদিন গেলো শর্টপ্যান্ড পড়া খালামনিদের দেখতে দেখতেই 😀 সেখানে আমি স্নোর্কলিংয়ে গিয়ে প্রচুর মাছ দেখেছিলাম। আমার জীবনে এতো মাছ আমি দেখিনি আগে।
তার পর দিন আমি তাদের একটি হাসপাতালে গেলাম আমার কাশির জন্য চিকিৎসা নিতে। বেশ দারুন তাদের হসপিটালের সিষ্টেম। আমার ভালো লাগলো খুব। সেদিনই বিকাল ৪ টায় থাই এয়ারওয়েজ দিয়ে ব্যাংকক গেলাম মাত্র ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটে। সেখানে গিয়ে হোটেলে থাকলাম। হোটেলের নাম Onox. কি দারুন হোটেল! আমার ব্যাপক ভালো লেগেছে। সেখানে গিয়ে আমি আমি Rama 9 এ আমার বন্ধু ও ব্যবসায়ের পার্টনারের সাথে দেখা করি। দারুন সময় কাটে আমাদের। সাথে ছিলো তার বাচ্চাও।
ঐদিনই আমরা আবার রাতে দেখা করি V24 নামে একটি রেস্টুরেন্টে। সাথে ছিলো আমার বান্ধবীও। হাহা। কি দারুন একটি পার্টি ছিলো। তারপর আমার পার্টনার আমাকে তার কোটি টাকার গাড়ি করে আামার হোটেলে পৌছে দেয়। তার পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যাংকক থেকে বাংলাদেশে চলে আসি। সর্বমোট ৮ দিনের এ টূর ছিলো অবিস্মরনীয়।
ভুলার মতো নয় এইসব স্তৃতি। থাইল্যান্ড ইজ অসাম। বিশেষ করে ব্যাংকক আমার এতো ভালো লেগেছে যা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। আসার সময় আমি থাই এয়ারওয়েজ এ আসি। ডাবল টাকা লেগেছে যদিও কিন্তু মনে শান্তি পেয়েছিলাম। কারন ইউ এস বাংলা নাম শুনলেই এখনও কিছুটা ভয় কাজ করে। তারপর এয়ারপোর্ট থেকে একটা হিরো গো প্রো একশন ক্যামেরা কিনে নিয়েছিলাম। মেমোরীসহ ৩৮ হাজার টাকা পড়েছিলো।
আমি যে যে জায়গায় গিয়েছিলাম তাদের নাম যথাক্রমেঃ
- Pattaya Tiger Park
- Pattaya Main City Tour
- Pattaya Shooting Park
- Pattaya Floating Market
- Phuket Phi Phi lsiand, Maya Bay Island
- Bangkok City Tour
এই হলো আমার থাইল্যান্ড ভ্রমন। আমার জীবনের স্বরনীয় হয়ে থাকবে এই ভ্রমনটি।
আপনার ভ্রমণ শুভ হোক
শামীম হাসান
যারপরনাই ভালো লাগলো শামীম ভাই আপনার ভ্রমণবৃত্তান্ত। থাইল্যান্ডে পোশাক শিল্প নিয়ে ব্যবসা করতে চাই।আপনি কি আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন ? আশায় রইলাম।
শামিম ভাই আপনার লেখা গুলো পড়ে অনেক অনেক ভালো লাগে একটা অনুরোধ আপনি কষ্ট করে আপনার ফেসবুক একাউন্ট এ আমার বন্ধুত্ব এর অনুরোধ গ্রহন করুন, আপনার পেশা কি?
ধন্যবাদ ভাই