আমার সকল পাঠকের কাছে আমি অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী যদি আমার লেখা কারো ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মিলে যায়। কারন আমি যা নিয়ে লেখতে বসেছি তা হলো সমষ্টিগত ভুল। নির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। তো চলুন কিছু কথা বিবেক ও মাথাটাকে কাজে লাগিয়ে জেনে নেই। এখানে আবেগ ও স্বজনপ্রীতি গ্রহনযোগ্য নয়। আমি শুধুই নিরালা বাস্তব কথাগুলি তুলে ধরার চেষ্ঠা করবো।
একটা সময় মানুষ সমাজবদ্ধ জীব ছিলো না। বসবাসের প্রয়োজনে মানুষ একটা সমাজে পাশাপাশি বসবাস করার প্রয়োজনবোধ করে এবং হাজার বছর ধরে মানুষ সামাজিক জীব হিসাবেই বসবাস করে আসছে। তারপর থেকে তা নিয়ন্ত্রন করার জন্য সমাজপতি, নেতা, নিয়ন্ত্রক, শাসক যাই বলেন না কেনো তার আবির্ভাব ঘটে। শুধু সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে নয়, জীবনের যে কোন অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন জনকে সমর্থন করে থাকি। স্কুলে ক্যাপ্টেন নির্বাচনে সমর্থন করার মাধ্যমে আমার জীবনের প্রথম সমর্থন শব্দটির সাথে জড়িত হতে হয়। তারপর বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে বন্ধুবান্ধব, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বিভিন্ন বিষয়ের সাথে নিজের সমর্থন যুক্ত হতে থাকে।
যখন আমি একটা স্কুলের ক্যাপ্টেন নির্বাচনে আমার বন্ধুকে সমর্থন করেছিলাম তখন আমি শুধু তার নেতৃত্ব বা নিয়ন্ত্রন করার গুনাবলী দেখেই সমর্থন করেছিলাম। ধরেন আমি রহিম, করিম ও জলিলের মধ্যে রহিমকে তার নেতাসুলভ গুনাবলীর জন্য ক্লাশ ক্যাপ্টেন নির্বাচনে সমর্থন জানাই। তার মানে কিন্তু এই না যে, আমি তার অন্ধ ভক্ত হয়ে গেলাম এবং করিম ও জলিল আমার চোখে খারাপ বা শত্রু। আবার তার মানে এটাও নয় যে, রহিম যদি কখনো মেয়েদের সাথে ইভটিজিং করে, শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবি করে, পড়াশুনা না করে নেতাগিরিই করে কিংবা ক্যাপ্টেন হিসাবে অহংকারের কারনে সবার সাথে দুর্ব্যবহার করে, তা আমি সমর্থন করবো বা মেনে নিবো। এ ক্ষেত্রে আমরা বরাবরই ভুল করি। যদি রহিমের খারাপ গুনাবলীগুলি আমার চোখে ধরা পরে তাহলে তার প্রতিবাদ করা আমার নৈতিক দ্বায়িত্ব। একজন সমর্থক হিসাবে তাকে সমর্থন করার মানে এই নয় যে, আমি তার সবকিছু মেনে নেবো। তার খারাপ গুনাবলীকে নীরবে সমর্থন দিয়ে যাবো। এটা যদি আমি বা আমরা করি তাহলে এটাই হবে অন্ধ সমর্থন। এটিকে এক কথায় অজ্ঞতা কিংবা মূর্খতা বললেও দোষ হবে না।
আমি উদাহরন দিয়ে নিলাম আগেই, কোনটা সমর্থন আর কোনটা অন্ধ সমর্থন। আশাকরি এবার আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আমার কথাগুলি। এবার একটু বড় পরিসরে লেখবো। নিশ্চই আপনি অবগত হবেন যে, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে আজকাল সমর্থন বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ন যে, এটা ছাড়া আপনি কিছুই ঠিকভাবে করতে পারবেন না। আপনার নিজের কাজে যেমন অন্যদের সমর্থন দরকার তেমনি অন্যজনকে আপনার নিয়ন্ত্রক বানাতেও আপনার মূলবান সমর্থন দরকার। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আমাদের বিভিন্ন সময়ই সরকার-প্রধান, মন্ত্রী, এমপি, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজ নিয়ন্ত্রকদের সমর্থন দিতে হয়। আমাদের সমর্থন নিয়েই তারা তাদের মর্যাদার আসনে বসেন। নিশ্চই আমরা কাউকে এ কারনে সমর্থন দেই না যে, তারা নেতা হয়ে জনগনের উপর অত্যাচার করবে, জানগনকে হয়রানি করবে, কিংবা সরকারী টাকা নিজের পকেটে ঢুকাবে। এ পর্যন্ত নিশ্চই সবাই আমার সাথে একমত?
এবার আসেন আসল কথায়, যদি আপনার সমর্থিত কোন নেতা একটি নিশ্চিত ভুল কাজ করে তাহলে আপনার কি করা উচিত? তাকে আপনার সাধ্যমতো বলা উচিত যে, তিনি ভুল কাজটি করছেন। আপনি তাকে সমর্থন দিয়েছেন ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার জন্য। তাকে কোনো খারাপ কাজের সমর্থন আপনি দেননি। আর যদি আপনি তার কোন খারাপ কাজ দেখেও চুপচাপ থাকেন তাহলে তা কিন্তু অন্ধ সমর্থনের পর্যায় পড়ে যায়। যা পরবর্তীতে কোন না কোন দিন আপনার উপর ই এসে পড়বে। আজ যদি আপনার সমর্থিত নেতা আপনার সমর্থন নিয়ে অন্য একটি ব্যক্তিকে হয়রানি করে, তাহলে কোন একদিন সে অন্য একজনের সমর্থন নিয়ে আপনাকে হয়রানি করবে। কারন সে তো তার মর্যাদার সঠিক মূল্য দিলে কখনোই ভুলভাল কাজ করতো না।
তাহলে আপনার কি করনীয় হতে পারে? আপনি যাকে সমর্থন দিয়ে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন তাকে বলুন তার ভুল সিদ্ভান্তের কথা। যদি আপনার মনোনীত সঠিক নেতৃত্ব প্রত্যাশী ব্যক্তিটি ভুল কাজেও ইতস্তত না হয়ে দাম্ভিকতা নিয়ে ভুল নেতৃত্বে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে আপনার নিশ্চই উচিত হবে তার প্রতি আপনার সমর্থন উঠিয়ে নেওয়া। আর যদি আপনি তা করতে না পারেন তাহলে সহজেই বলা যেতে পারে আপনি একজন মুর্খ অন্ধ ভক্ত। অথবা এটাও বলা যেতে পারে যে, আপনি আপনার সুবিধার জন্য কিংবা আপনি ফায়দা লুটার জন্য তাকে সমর্থন করছেন। আর এখাবেই তো রচিত হচ্ছে একটার পর একটা অপকর্মের পাহাড়!
এবার শেষের প্রসঙ্গ নিয়ে বলছি, চামচামি শব্দটি আমি মোটেও ব্যবহার করতে চাইনি। কিন্তু এখনকার যা পরিস্থতি তাতে আমি এর চেয়ে সন্মানজনক কোন শব্দ পাইনি বলে দুঃখিত। নিশ্চই আপনি আমার সাথে একমত হবেন যে, আজকাল সমর্থনের নামে চামচামিই বেশি হয়ে থাকে। যদিও আমি এর ব্যাখা দিতে গেয়ে কোন ধারার বেড়াজালে পড়তে চাই না। চোখ কান খোলা রাখুন। আপনি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
বিষয়টা অনেকটা এমন যে, আমি তমুক ভাইকে সমর্থক করি। তিনি যদি মনোরঞ্জনের জন্য আমার পাশের বাড়ির মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায় তাহলেও আমি ভাইকেই সমর্থন করি। তিনি যদি জনগনের হাজার কোটি টাকা আত্নসাত্ করে তাহলেও আমি তাকে জেনেশুনে সমর্থন করি। যদি তমুক ভাই শুধুই মাত্র ক্ষমতা দীর্ঘ করার জন্য অন্যায়ভাবে প্রতিপক্ষকে আঘাত করে তাহলেও আমি ভাইকে সমর্থন করি। যদি তমুক ভাইটি গরীব কৃষক কিংবা ব্যবসায়ী থেকে অবৈধভাবে চাদা দাবি করে তবে তা চাক্ষুস দেখেও আমি তমুক ভাইকে সমর্থন করি। তমুক ভাইটি যখন তখন যার তার সাথে কুকুরসুলভ ব্যবহার করে, তা নিজের চোখের সামনে দেখেও আমি তমুক ভাইকে সমর্থন করি। আর কতগুলি লেখবো? এই রকম শত শত লাইন লেখা যাবে। এইরকম অবস্থায় যখন আপনি কাউকে সমর্থন করবেন তখন সেটি আর অন্ধ সমর্থন থাকে না। সেটি তার থেকেও ঘৃনিত হয়ে যায়। যার নাম “চামচামি”।
আমার পাঠকের কাছে অনুরোধ। আপনার মূলবান বিবেকটাকে আপনার অন্ধ সমর্থনের কাছে বিক্রি করে দিবেন না। মন মতো কাউকে না পেলে সমান্তরালে থাকুন। তবও অন্যায়, অবিচার, ঘুষখোর, ধর্ষক, দুর্নীতিপরায়ন কোনকিছু বুঝতে পারার পরেও কাউকে সমর্থন দিবেন না। কারন আপনি সৃষ্টির সেরা হওয়ার পেছনে যে কারন রয়েছে তা হলো আপনার সঠিক বিবেকবোধ ও ভুল সঠিক বুঝতে পারার সক্ষমতা। যদি এসব জেনে শুনে মেনে নেন তাহলে আপনাকে এই পৃথিবীর যে কোন জঘন্য প্রানীর সাথে তুলনা করে যেতে পারে।
সকলের সুন্দর জীবন কামনায় আজ এই পর্যন্তই।
শামীম হাসান
Credits:
Photo Credit: http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/drishtikon/2016/07/14/130868.html
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ। উচিত কথা বলছেন ধন্যবাদ দিলে ছুট করা হবে । লেখাটা আমার ভালো লেগেছে।
মোবাইল দিয়ে ফটোগ্রাফি!
মোবাইল ফটোগ্রাফির নানারকম কলাকৌশল ও ট্রিক্স শিখতে চাও? তাহলে এখনই নিচের লিংকে ক্লিক করে কিনে ফেলো “মোবাইল ফটোগ্রাফি” ডিজিটাল বইটি!
https://10ms.io/OevKFE