“গিভ এন্ড টেক” -এক প্রানঘাতি রোগ। যা ধ্বংস করে তরুনীদের স্বপ্ন ও জীবন

(Last Updated On: June 8, 2015)

হ্যালো। আমি কোন প্রফেশনাল লেখক কিংবা ব্লগার নই। নই কোন বিখ্যাত ব্যক্তি ও । আমি শুধু কিছুতে অসংগতি দেখলে তা লিখার অভ্যাস করি। লেখার অভ্যাস নাকি অনেক ভালো। তাই মনের কথাগুলো মনের মতো করে লিখে যাই।

আজ সকালে ফেসবুকে একটা অনুসন্ধানী রিপোর্ট দেখলাম। দেখার শেষ পর্যায়ে আমার বুকটা কেপে উঠছিলো। কি সকল জঘন্য কাজকর্ম চলে মিডিয়ার আড়ালে।

আসল কথায় আসি। আমি লিখছি মিডিয়ার আড়ালে চলতে থাকা এক জঘন্য প্রানঘাতি রোগ “Give and Take” (গিভ এন্ড টেক) নিয়ে। আপনি বোধ হয় এখনো বুঝতে পারেন নি। তো বুঝিয়ে বলছি।

উঠতি বয়সের তরুনীদের মাঝেই হঠাৎ তারকা হওয়ার ভুত চাপে। তারা নিজেদের কে শ্রেষ্ট প্রমান করতে চায়। তাই দ্বারস্থ হয় মিডিয়ার। কিন্তু তার আগে দরকার হয় কোন কোচিং সেন্টার যা অভিনয় শেখায়। অথবা কোন নাটক বা চলচিত্রে অভিনয় করার সুযোগ করে দেয়- এমন কোন ব্যক্তি। তারাই মূলত অভিনেতা বানাতে সহায়তা করে থাকে।

অনুসন্ধান রিপোর্টটিতে যা দেখলাম তা ছিলো এইরকম। একটা তরুনী অভিনেত্রী হবার জন্য দ্বারন্থ হয় একটি কোচিং সেন্টার এর। প্রশিক্ষক তাকে সরাসরি ই প্রস্তাব করে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করার। কপাল ভালো সেখানে তার আড়ালে ছিলো অনুসন্ধানী দলের সদস্যগন। তা না হলে হয়তো বা সেদিন আরও একটা তরুনীর স্বপ্নভঙ্গ হতো। সাথে তার ভালো চরিত্র পৃথিবী থেকে বিদায় নিতো।

এবার আমার কথায় আসি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তাকে যদি পরিচালকের কাছে থেকে কিছু পেতে হয় তাহলে কিছু না কিছু দিতে হবে। তা আসলে যা তা কোন জিনিস নয়। তাকে দিতে হবে দৈহিক তৃপ্তি। খুব খোলামেলা ভাবে লিখছি। তার কারন হলো আমার এই ব্লগ কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঠক পড়বে না। পরিচালকের সাক্ষাতকার থেকে জানতে পারলাম, এ প্রথাটির নাম হলো গিভ এন্ড টেক। সহজ কথায় দাও ও নাও।

কিন্তু আমার কথা অন্য কোথাও। তারা কি করছে আসলে? শুধুমাত্র ভোগ করেই কি কোন মেয়েকে স্টার বানিয়ে দিচ্ছে? না ভাই। এই রকম কোন ব্যাপার না। যাকে বশ করতে পেরেছে তাকে ঠিকই আর পাত্তা দিচ্ছে না। একবার তাকে গোপন কক্ষে নিয়ে যেতে পারলে কাজ শেষ। পরে এমন ভাব নেয় যেন আর তাকে চিনেই না।

অনুসন্ধানটিতে দেখলাম যে, অভিনয় শেখানোর রুমের পাশেই রয়েছে ছোট ও নিরাপদ একটি কক্ষ। যাতে রয়েছে, একজন মানুষকে ব্লাকমেইল করার মতো যথেষ্ট সরঞ্জাম। ওরে বাবা, আমি নিজে হলেই তো ঐ জায়গা থেকে ভালো অবস্থায় ফিরে আসতে পারতাম না। পিস্তল, ক- – – ম, সহ আরও কি কি যেন দেখলাম। দেখতে দেখতে আমার ই ভয় লাগছিলো।

আরও অবাক করার বিষয় হলো যে, এ জঘ্যন্য বিষয়টি এতো বেশিই প্রচলিত যে,মিডিয়া জগতে নাকি তার একটি স্বীকৃত নাম ও রয়েছে। তার নাম “গিভ এন্ট টেইক”। কিছুদিন আগে ঢাকা এফ,এম এর “অন্ধকারের গল্প” নামক অনুষ্ঠানে একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এসেছিলো। মিডিয়া জগতের আড়ালের কিছু জঘন্য নিয়ম কানুন বলার জন্যে। সেখানে ও একই কাহিনী । তারকা হতে চাও? তবে আগে প্রমোদ ভ্রমনে যাও। এটিই নাকি নিয়ম। একটি প্রচলিত রীতি।

কি হয় এর পরিনাম? কিছু অসাধু বদমাশ মানুষের তৃপ্তি মেটে, আর কিছু অবুঝ তরুনীদের বুকে তিলে তিলে গড়ে ওঠা স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়। যে জগৎটাকে হয়তোবা কখনো স্বপ্ন দেখতো হয়তো তা আর কথনো ভুল করেও মনে আনে না।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? মিডিয়ায় অভিনয় এর সুযোগ করিয়ে দেবার নাম করে আর কত তরুনী তাদের ইজ্জত ভূলন্ঠিত করবে? আর কত তরুনী একটা বন্দ রুমে আটকা পরবে পশুদের পাতানো জালে? এর কি কোন সমাধান হবে না???

সমাধান কিভাবে সম্ভব?

খুবই সহজ সমাধান। যদি সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হয় তবেই সম্ভব। আর একটা সমাধান থাকতে পারে। হুট করেই কোন ব্যক্তির কথামতো যদি সেইফ রুমে না যাওয়া হয় তবে আর কোন সমস্যার ই সৃষ্টি হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
এভাবেই হয়তো বা চলতে থাকবে মিডিয়ার আড়ালে “Give and Take”। এ রোগ থেকে কোন দিন ও মিডিয়া কলঙ্কিত মুক্ত হতে পারবে না। যদি না আমরা সচেতন হই অথবা দেশে এর বিরোধী কঠোর আইন প্রনয়ন না করা হয়। আমি আইন প্রনয়ন বলতে শুধুমাত্র প্রনয়নই বুঝাচ্ছি না। তার যথাযথ বাস্তবায়ন ও বুঝাচ্ছি।

সবাই সচেতন হোক। আর যেন কোন তরুনীকে নীরব কক্ষে নীরবে ধর্ষিত না হতে হয়, সে প্রত্যাশা করছি। শুধুমাত্র সচেতনতাই আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

—শামীম হাসান শাকিল