Site icon শামীম হাসান শাকিল

আমার কলকাতা ভ্রমন অভিজ্ঞতা ও ভ্রমন গাইড

(Last Updated On: June 10, 2019)

সুপ্রিয় বন্ধুরা, আমি শামীম হাসান আবারো লিখতে  বসলাম আমার কলকাতা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। এটাই আমার সর্ব প্রথম দেশের বাহিরে ঘুরতে যাওয়া। কৌতুহল বসত  ইন্ডিয়ার ভিসাটা করেছিলাম। আজকের পোষ্টে আমি বিস্তারিত লিখার চেষ্ঠা করবো কিভাবে আপনি কলকাতা ঘুরে আসতে পারবেন। ছবিগুলো দিলাম আপনাদের সুবিধার জন্য। ফেসবুকে আমি http://facebook.com/shamimhsm

প্রথমেই বলে নেই আমি কলকাতা গিয়েছিলাম খুব গরম এর সময়। তাই অভিজ্ঞতা খুব বাজে। আমি গরম সহ্য করতে পারি কিন্তু কলকাতার এতো গরম সহ্য করতে পারি নাই।  আমরা দুইজন একসাথে গিয়েছিলাম। আমার সফর সঙ্ঘী ছিলো আরিফ ভাই।চলুন শুরু করা যাক।

মৈত্রী পরিবহন

আমি সিদ্বান্ত নেই বাসে করে যাবো। যেহেতু বাংলাদেশে থেকে সরাসরি বাস যাওয়া আসা করে কলকাতায়। পাসপোর্টে “হরিদাসপুর”  বর্ডার উল্লেখ করা ছিলো। তাই যশোর এর বেনাপোল বন্দর দিয়েই কলকাতা যাওয়ার সিদ্বান্ত নেই। ৬-৪-২০১৬ তারিখ কমলাপুর এর মৈত্রী বাস কাউন্টার থেকে কলকাতার করুনাময়ী, সল্টলেক যাওযার জন্য টিকিট কনফার্ম করি।

যাত্রা ছিলো ১১ তারিখ রাতে। মূল্য ছিলো ১৩৫০ টাকা। যদিও অন্যান্য বাস থেকে এটার টিকিট এর মূল্য অনেক কম। সার্ভিস খারাপ নাহ। মোটামোটি যাওয়ার মতো। আবার শ্যামলী বিআরটিসি টিকেটের দাম ১৯৫০ টাকা। একই ধরনের বাস, একই ধরনের সার্ভিস। তেমন কোন তফাৎ নেই দুইটার মধ্যে। তাই বাসে যাওয়ার জন্য মৈত্রী ই ভালো।

যথারীতি ১১ তারিখ রাত ১০ টায় বাস ছেড়ে দিলো কলকাতার উদ্দেশ্যে। ভালোই লাগতেছিলো। এসি বাস। সরকারি সার্ভিস হিসাবে খারাপ নাহ। কোখাও কোন স্টপেজ দিলো নাহ। একদম সকাল ৫ টায় যশোর এর কোন একটা আনাড়ী এলাকায় বাস থামালো। ১০ মিনিটের বিরতি দিলো। কোন জরুরি কাজ থাকলে তা সেরে ফেলার জন্য। আবার বাস চলতে লাগলো।

বাস স্টপেজে খাবার দাবার

সকাল ৯ টার দিকে বেনাপোল বন্দরে পৈাছালাম। প্রথম ভ্রমন হওয়ার কারনে কিছুই বুঝলাম না। দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। বাস থেকে নেমে বুঝলাম ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস করাতে হবে। পাসপোর্ট ও বাস কাউন্টার থেকে দেওয়া ২ টি ফরম পূরন করলাম। এবং সেগুলো নিয়ে লাইন ধরে ইমিগ্রিশন অফিসার এর হাতে দিলাম।

তিনি আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলো কি করেন? আমি বললাম স্টুডেন্ট। তিনি আমার একটা ছবি তুললো এবং একটা সিল মেরে দিলো। ব্যাস কাজ শেষ। বাংলাদেশ এর সীমানা পেরিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেলাম হেটে হেটে।

বেনাপোল বর্ডারইন্ডিয়া যাওয়ার পর সর্বপ্রথম লাইন ধরে দুইজন পুুলিশ অফিসার পাসপোর্ট চেক করলো। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমার কাছে ডলার আছে কিনা। আমি বললাম আছে। আসলে আমি ডলার নিতে ভুলে গেছিলাম। বললো ডলার দেখাও। আমি বললাম আমি আনতে ভুলে গেছি।

অন্য একটা পুলিশ অফিসার কে ডেকে বললো তার সাথে যেতে। তিনি আমাকে আড়ালে নিয়ে সরাসরি বললো ৫০০ টাকা দে 😀 আমি ও দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সাথে সাথে পকেট থেকে বের করে দিয়ে দিলাম।

চেকিং শেষে আবার সিরিয়াল ধরলাম ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে। তিনি পাসপোর্ট চেক করে একটা সীল মেরে দিলো। ব্যাস আমি এখন নিরাপদে ইন্ডিয়া ঘুরে বেড়াতে পারি। বাসে উঠলাম। বাস চলতে লাগলো। অবশেষে দুপুর ১ টায় বাস পোছালো করুনাময়ী আন্তর্জাতিক বাস ষ্টান্ড, সল্টলেক। সেখানে গিযেই আমি হতাশ। কলকাতার মুভিতে যেই কলকাতাকে দেখি বাস্তবে তার পুরু উল্টো। খুব বাজে অবস্থা পরিবেশের।

কলকাতার রাস্তা

বাস থেকে নেমে ৪ জন মিলে ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে চলে গেলাম নিউ মার্কেট। কারন সেখানে তুলনামূলক কম ভাড়ায় রুম পাওয়া যায় ও ঘুরার অনেক যায়গা নিউ মার্কেটের কাছাকাছি। অনেক ঘুরে একটা রুম ম্যানেজ করলাম। Hotel Wellesley তে উঠলাম।

Hotel Wellesley

হোটেলটা বেশ ভালোই লেগেছিলো। ১৪০০ টাকায় ডাবল বেডের একটা রুম একদিনের জন্য নিয়ে নিলাম। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে কলকাতার ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল দেখতে গেলাম।

ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল

বিকাল ৫ টা বেজে যাওয়ার ভেতরে মেমোরিয়ালের ভেতরে ঢুকতে পারি নাই। তাই পাশের যায়গাগুলো ঘুরে ‍ঘুরে দেখেছিলাম। চারপাশটা ভালোই লেগেছে। পোলাপাইনকে দেখলাম আড়ালে ভালোই প্রেম করছে। 😀

 

ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল ঘুরার পর তার পাশেই বিশাল একটা মাঠে বসেছিলাম কিছুক্ষন। হঠাৎ মনে পরলো আইপিএল খেলা চলছে। ইডেন গার্ডেন তার পাশেই। ভাগ্যক্রমে তার পর দিন ছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স এর খেলা। ব্যাস হেটে হেটে ইডেন গার্ডেন গিয়ে ব্লাকে টিকেট কিনে ফেললাম। ৫০০ টাকার টিকিট ৬০০ টাকা নিয়েছিলো। যাই হোক, টিকিট কিনে হোটেলে ফিরলাম। হোটেলটা একটু দূরে ছিলো।

ইডেন গার্ডেন, কলকাতা

তাই পরদিন ঐ হোটেলটা ছেড়ে দিয়ে ইডেন গার্ডেন ্এর কাছাকাছি Hotel Biman এ উঠলাম। ঐ দিনই সাইন্স সিটি পুরুটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম।

সাইন্স সিটি, কলকাতা

পরে আইস ক্যাটিং শপিং সেন্টার ঘুরে আসলাম। তারপর ইডেন গার্ডেন এ খেলা দেখলাম কলকাতা নাইট রাইডার্স/মুম্বাই ইডিয়ান্স এর।

ইডেন গার্ডেন কলকাতা, সাথে আরিফ ভাই

 

পরদিন হোটেল ছেড়ে দীঘা যাওয়ার জন্য বাস ভাড়া করলাম। বাসে করে দীঘা সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য নিউ দীঘা চলে গেলাম। সেখানে Hotel Tokyo তে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে সমুদ্র দেখার জন্য চলে গেলোম সমুদ্র। বাহ। অসহ্য গরমের কলকাতা এবার কিছুটা ভালো লাগা শুরু হয়েছে। সমদ্রে বেশ বাতাস। সমুদ্রের হেব্বি গর্জন। রুপচাদা মাছ খেলাম। গুল্লা খেলাম। ভালোই লেগেছে।

দীঘা সমুদ্র সৈকতে রুপচাদা

পরদিন ঘুম থেকে উঠে উরিষ্যা বর্ডারে গেলাম বাসে করে। সেখান থেকে রিক্সায় করে বীচে পোছালাম। তেমন কিছু দেখতে পাইনি। তাই সেখান থেকে আবার বাইকে করে তালসিড়ি বীচে গেলাম। মাঝখানে নৌকায় করে যেতে হয়। যােই হোক, তালসিড়ি বীচটা ভালোই।

তালসিড়ি বীচ এ

মন্দ নয়। তার পর আরিফ ভাই বললো এখানে নাকি দুইটা মন্দির আছে। জাষ্ট দেখে আসা দরকার তাদের সংস্কৃতি বুঝার জন্য। সেখানকার বড় বড় দুইটা মন্দিরে গেলাম। যদিও ভেতরে যাই নি। পাশে দাড়িয়ে যে গন্ধ পেয়েছিলাম সেটা মনে হলে এখনো আমার বমি আসে। যাই হোক, তার পর দীঘার একটা পার্ক ভ্রমন করলাম। পুরুনো দীঘাও ভ্রমন করা হযেছে। তারপর হোটেলে ফিরলাম।

তালসিড়ি বীচ এ আমি ও আরিফ ভাই

রাতে থেকে সকালে আবার কলকাতা ফিরলাম। এসে রবীন্দ্রনাথ এর বাড়ি দেখলাম। ভালোই লেগেছে। বড় বাজার আসলাম শপিং করার জন্য। একটা হোটেলে থাকলাম। আরিফ ভাই শপিং করলো। এদিকে আমি অস্থির হয়ে গেছি বাসায় ফিরার জন্য। কোলকাতা শহরে আমার মন টিকতেছিলো না। তাই আমি শ্যামলীর টিকেট কাটলাম। পরদিন নিকো পার্ক দেখলাম।

নিকো পার্ক, কলকাতা

রাতে একটা হোটেলে থেকে পরদিন আরিফ ভাইও টিকিট কাটলো আমার অত্যাচারে। তিনি যদিও আরো কিছুদিন থাকতে চেয়েছিলো। যাই হোক, পরে একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে ১৮ তারিখ সকাল ৬ টায় বাসে উঠেছিলাম।

শ্যামলী পরিবহন

শ্যামলী কাউন্টারের সাথে হোটেল

আমি বেশি শপিং করিনাই। একেবারে হালকা শপিং। যাই হোক, বর্ডারে পৌছালাম। প্রথমে ইমিগ্রেশন ভালো মতোই শেষ হলো। তারপর নাকি আবার কিসের লাইন করলো।যাওয়া মাত্রই বললো খরচা দিন, খরচা দিন 😀  ১০০ টাকা দিয়ে দিলাম। ইন্ডিয়ার ঝামেলা শেষ।

বাংলাদেশে ঢুকার পর একটা পুলিশ বলে, ভাই আমাকে ১০০ টাকা দিন আমি সিল মেলে দিই। লাইন ফাইন লাগবে না 😀 আমি দিলাম। সিল ও মেরে এনে দিলো। ভালোই তো। আবার কাষ্টমস লাগবে। বলে আরো ১০০ দিন আমি পাস করিয়ে দেই। কোন চেক টেক হবে নাহ। আহা ভালোই তো। দিলাম। পাস করিয়ে দিলো। সব শেষে বলে ভাই ্আরো কিছু বকশিস দেন 😀 আমি হাসলাম। বললাম আর কত বকশিস চান রে ভাই। তিনিও হেসে দিলো। সব ঝামেলা শেষ।

বাসে ্ওঠলাম। কিছুক্ষন পর আবার বিজিবি চেকিং। যাদের যাদের সন্দেহ হয় তাদের ব্যাগ খুলে চেক করে। কোন জিনিস ৭ টার বেশি আনলে জবাবদিহি করতে হয় এখানে।

দুপুর দুইটায় মাগুরা একটা বাস ষ্টপিজে থামালো। হোটেলে বেশ খাওয়া দাওয়া করলাম। মনে হচ্ছিলো ৭ দিন পর নিজের মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছি। তারপর বাসে ওঠে সোজা কমলাপুর। থাগ লাইফ 😀

সবশেষে আমি বলি কি, যদি সংস্কৃতি দেখার জন্য কলকাতা যান তবে ঠিক আছে। যদি ভালো লাগার জন্য যান তবে আমি বলবো বাংলাদেশটা আগে ঘুরে ঘুরে দেখুন। কলকাতা বাংলাদেশের থেকে জঘন্য। বাংলাদেশ অনেক সুন্দর একটা দেশ। সেটা কলকাতা গিয়ে অনুভব করেছি। সবচেয়ে বড় সমস্যা আমার যেটা হয়েছে সেটা হলো খাবার দাবারের। তাদের খাবারের গন্ধ আমি সহ্যই করতে পারি না। এক হোটেলে বললাম খাসি দিতে। দিলো পাঠা। সেই মাংসে কামড় দেওয়ার পর দুই দিন ‍শুধু জুস খেয়ে ছিলাম। উপায় ছিলো না 😀

আমরা দুইজন যাওয়াতে অনেক টাকা সেভ হয়েছে। আমার খরচ হয়েছে মাত্র ১৮,০০০ বাংলাদেশি টাকা। আমরা বেশ হিসেব করে রুম ভাড়া নিয়েছি। তাই কম পড়েছে। আমরা ৭ দিন ছিলাম কলকাতা।

আমি গরমের কারনে দূরে কোথাও যাই নাই। নয়তো ভালো লাগলে কাশমির, দার্জির্লি অবশ্যই যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো। সব মিলিয়ে ভ্রমন আমার মন মতো হয় নাই ফ্রান্স 😀

কলকাতার যে সকল যায়গা ঘোরার মতো আছে এক নজরে তার লিষ্ট।

১। ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল
২। সাইন্স সিটি
৩। ইডেন গার্ডেন
৪।ইনডিয়ান মিউজিয়াম
৫। ইকো পার্ক
৬। নিকো পার্ক
৭। একুয়াটিকা ওয়াটার কিংডম
৮। দীঘা সমুদ্র সৈকত
৯। তালসিড়ি লাল কাকড়ার বীচ
১০। কবি রবীন্দ্রনাথ এর বাড়ি

Exit mobile version