Site icon শামীম হাসান শাকিল

দুঃখিত । ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি এসব মানতে পারছি না। শামীম এর ব্লগ

Digital Bangladesh Problems 1
(Last Updated On: March 7, 2017)

অনেক দিন ধরেই এমন একটা বিষয় নিয়ে লিখবো ভাবছি। কিন্তু সময় করে উঠতে পারছি না। কিন্তু আজ বেশ কষ্ঠ নিয়ে লিখতে বসেছি। কোন উপায় দেখছি না যে 🙁

ভিশন ২১ এ “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য নিচ্ছেন নানার পরিকল্পনা। বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমি তার জন্য গর্ববোধ করি। আমি মনে প্রানে চাই, যেনো প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে একটি সত্যিকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশে” উপহার দিতে পারেন। কিন্তু সমস্যাটা অন্য যায়গায়।

জাতীয় পরীক্ষার ফলাফলে চরম ভোগান্তিঃ যখনি কোন জাতীয় পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা হয় তখনি শুরু হয় ভোগান্তির প্রথম ধাপ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা ওয়েবসাইটে আজ ৩ দিন ধরে ঢুকতে পারছি না। বিষয়টা এমন নয় যে, ওয়েবসাইটেই ঢুকতে পারছি না। ওয়েবসাইট টি মাঝে মাঝেই লোড হচ্ছে কিন্তু পুরুপুরি লোড হওয়ার আগেই টাইম আউট হয়ে যাচ্ছে। একজন অনলাইন প্রফেশনাল হিসাবে আমি যতটুকু বুঝতে পারছি যে, এটি সার্ভার এর ওভারলোড হওয়ার কারনে এ সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু একটি ভালোমানের সার্ভার কিনার জন্য কি বোর্ডের পর্যাপ্ত ফান্ড নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু তাহলে কোথায় যাচ্ছে এসব টাকা? আমি ঠিক জানি না এ বিষয়টি কার দ্বায়িত্বে পরে, মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নাকি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। যার দ্বায়িত্বেই হোক না কেনো, আমি বিশ্বাস করি তারা যদি এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয় তবে ১০০% এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমি শুধু চাইবো যেনো একজন ছাত্র হিসাবে যেনো সময় মতো আমি আমার রেজাল্টটি দেখতে পাই। “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর প্রনেতাদের কাছে আমার জোর দাবি থাকবে যেনো তারা আমার এ অধিকার আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। শুধু ওয়েবসাইট খুলে রাখলেই তা ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপরেখা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে না।

রাষ্ট্রীয় মোবাইল কোম্পানীর দুরবস্থাঃ গ্রামীনফোন এর যন্ত্রনায় সিদ্ভান্ত নিলাম যে, আমি টেলিটক সিম কার্ড ব্যবহার করবো। কিন্তু আজ ১ সাপ্তাহ হলো আমি সিম কার্ডটি কিনতে পারছি না। কারন বায়োমেট্রিক করার জন্য সার্ভারে কানেকশন দেওয়াই সম্ভব হচ্ছে না। বিক্রয়কর্মী অনেকবার চেষ্ঠা করেও পারলো না। আমার আর টেলিটক সিমকার্ডটি ও কেনা হলো না। সত্যিই খুব মন খারাপ হলো। কারন টেলিটকের অনেক ইন্টারনেট প্যাকেজই বেশ সাশ্রয়ী। একজন নাগরিক হিসাবে আমি গর্বের সাথে টেলিটক সিমকার্ড ব্যবহার করতে চাই। কিন্তু যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার পরেও আমি ১ সাপ্তাহ সময় ব্যয় করেও সিমটিই কিনতে না পারি তবে তা বেশ হতাশাজনক। বিষয়টা এমন নয় যে, আমি অসম্ভব কিছু দাবি জানাচ্ছি। পর্যাপ্ত ফান্ড থাকার পরেও শুধুমাত্র জবাবদিহিতার অভাবে একটা রাষ্ট্রীয় মোবাইল কোম্পানী শুধু রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ৭ দিন সার্ভার বন্ধ থাকে। অথচ আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে যদি মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী টেলিটকের প্রধান কর্মকর্তার কাছে শুধু মাত্র ফোন করে জানতে চায় কেন এ সমস্যা হচ্ছে তাহলে এ সমস্যাটা সমাধান হওয়া তুড়ির ব্যাপারমাত্র।

ইন্টারনেট এর দুর্লভ্যতাঃ আনুমানিক গত ২ বছর আগে আমি আমার একটা ষ্টাটাসের মধ্যে বলেছিলাম যে, আমি বাঁশের মাথায় মডেম লাগিয়ে থ্রিজি ব্যবহার করেছিলাম। তারপর অনেক কষ্ঠের পর এখন ব্রডব্যান্ড সংযোগ পেয়েছি। তাও তা সম্ভব হয়েছে আমার চেষ্ঠার কারনে। ৫০,০০০ টাকার মতো টাকা খরচ করে আমাকে এ ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিতে হয়েছে। আমি বলছি না যে, দেশে ইন্টারনেট নেই। কিন্তু যেখানে ঢাকায় ৫০০ টাকা দিয়ে ২ এমবিপিএস লাইন পাওয়া যাচ্ছে যেখানে আমি ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে ১২০০ টাকা দিয়ে ১ এমবিপিএস লাইন ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথচ যদি থানা পর্যায়ে উচ্চগতি সম্পন্ন ব্রডব্যন্ড সংযোগ এর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তা থেকে আমি সহজেই লাইন পেয়ে যেতাম। সরকারীভাবে গ্রাহক পর্যায়ে আমি কোন সুযোগ পাইনি। অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশে সহজলভ্য ইন্টারনেট ব্যবহার করা আমার অধিকার। শুধু মাত্র ঢাকা কেন্দ্রীক সুবিধা থাকলেই তো দেশ ডিজিটাল হবে না। বিশেষ করে আমার মতো অনলাইন প্রফেশনাল যেখানে আমার বাড়িতে বসেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি সেখানে ঢাকা গিয়ে জ্যাম বাড়ানোর কোন মানেই হয় না। অবশ্যই সাড়াদেশে সমানভাবে সরকারী উদ্যোগে ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করে তুলতে হবে। আমার জামানতে, সরকার সকল তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে অপটিক ফাইবার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু আমি বুড়ো হয়ে গেলে যদি ইন্টারনেট আসে তাহলে সে ইন্টারনেট দিয়ে আমি কি মাথায় নিয়ে নাচবো?

মোটকথা, ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাকে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় তা আমি মানতে পারি না। তাও ব্রডব্যান্ডের বিকল্প হিসাবে যদি রাষ্ট্রায়ত্ব  মোবাইল কোম্পানী টেলিটক গ্রামীনফোনের মতো সহজলভ্য নেটওয়ার্ক নিশ্চিক করতে পারতো তবে আমি অন্তত নিশ্চিন্তে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারতাম। সাড়াদেশে শতভাগ কভারেজে নিয়ে আসার মতো যথেষ্ঠ সুযোগ ও ক্ষমটা দুটোই করার একটি রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল কোম্পানীর থাকা উচিত এবং তা আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। যদি তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকে তাহলে এটি অসম্ভব কিছুই না। কারন স্লোগানটা যে, “ডিজিটাল বাংলাদেশ”। ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে না পারলে শুধু মুখে মুখেই এই স্লোগানটা বাস্তবায়ন করা যাবে। তবে হ্যা, অবশ্যই দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক অনেক এগিয়েছে তবে তা অবশ্যই সত্যিকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর ধারে কাছেও নাই। শুধু প্রকল্প হাতে নিলেই এ দেশে উল্লাসিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই কারন তার পরবর্তী রক্ষনাবেক্ষন নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় থাকি। সুষ্ঠু জবাবদিহিতার অভাবে শতভাগ সম্ভব জিনিসগুলি ও অসম্ভব নামের ঘোর অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে অনেকটা সময় ধরে।

সরকারী ওয়েবসাইট এর কথা বললেই একটা ঘৃনার জন্ম নেয় মনে। বিষয়টি দেশের সকল অনলাইন প্রফেশনাল আমার সাথে একমত হবে। এ অবস্থা থেকে আমরা কবে বেড়িয়ে আসবো? পর্যাপ্ত ফান্ড থাকার পরেও কেনো দেশের সরকারী ওয়েবসাইট পর্যায়ে কেনো এতো অনিয়ম? যেখানে আমাদের দেশের ফ্রিলান্সাররা বিদেশের লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট নির্মান করে দিচ্ছে, থিম ফরেষ্টে আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইন প্রতিনিয়ত আপলোড হচ্ছে, জুমশেপারের মতো আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানী বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তারেক ভাইয়ের “উইডেভ্স” আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রসংসিত হচ্ছে সেখানে সরকারী ওয়েবসাইট গুলির দ্বায়িত্ব কাদের দেওয়া হয়, যে তা ব্রাউজ করতে গেলেই ৩ দিন সময় লাগে ওয়েবসাইট পুরুপুরু লোডিং হতে???

যদি নেতৃত্বস্থানীয় কেউ আমার এ ব্লগটি পড়ে থাকেন তবে আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে আমার প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করবেন না। ভোগান্তি দূর করে আমাকে আমার প্রাপ্য অধিকার আদায়ের সুযোগ করে দিন। আপনার কাছে আমি ও আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত তরুন প্রজন্ম চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

শামীম হাসান
বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ তরুনের পক্ষে

আমার ফেসবুক

Exit mobile version